1. newsiqbalcox@gmail.com : Somoy Bangla : Somoy Bangla
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ১২:০৭ অপরাহ্ন

অর্ধকোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ কক্সবাজার যুব উন্নয়ন উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে

ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ২০৭ ভিউ সময়

নিজস্ব সংবাদদাতা :

কক্সবাজার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ হাসান আলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি ও প্রশিক্ষকের জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে মে মাসে ১ মাস মেয়াদি বিভিন্ন প্রশিক্ষণে কক্সবাজার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে  উপ-পরিচালক (অ:দা) দায়িত্ব পালনকালে প্রশিক্ষণের ভাতার টাকা ও ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও বেসরকারী ইন্সট্রাক্টরসহ প্রায় ১০-১২জন কর্মকর্তা।

ওয়েব ডিজাইন কোর্সে অনিয়ম
গত ১৬-৪-২০২২ সালে উপ-পরিচালক (অ:দা) পালন কালে সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ হাসান আলীর স্বাক্ষরিত ও সীল যুক্ত নথিতে ওয়েব ডিজাইন ১ মাস বিষয়ক প্রশিক্ষণ বরাদ্দ ছিল ১৭৯০০০ টাকা। এই কোর্স পরিচালনায় প্রশিক্ষক ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কম্পিউটার বিভাগের সহকারী প্রশিক্ষক মাসুদ রানা, কম্পিউটার বিভাগের কম্পিউটার ইন্সট্রাক্টর মোঃ জয়নুল আবেদীন। এই কোর্সে মাসুদ রানাকে ৪৪ টি ক্লাসের জন্য ৪৪০০০ টাকার মধ্যে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন । আগে থেকে নথিতে স্বাক্ষর নিয়ে হেন্ড রাইটিং করে তার নামে ৪৪ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা পরিশোধ দেখানো হয়। অন্যদিকে প্রশিক্ষক জয়নুল আবেদীনকেও ৪৪ হাজার টাকার মধ্যে ৬-৭ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা প্রদান করেন বাকী অর্থ ডিডির পকেটে চলে যায়।

এই বিষয়ে কোন কথা বললে ডিজিকে বলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করবেন বলে ভয় দেখানো হয়। প্রতিজন ২২ শত টাকা করে ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা বরাদ্দ ছিল ৬৬০০০ টাকা। কিন্তু এই টাকা তিনি ঠিকমত ভাতা পরিশোধ না করে প্রশিক্ষণার্থীদের স্বাক্ষর জাল করে ৭০% টাকা আত্মসাৎ করেন। ২২ শত টাকার তাকে মধ্যে ১৫০০ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওয়েব ডিজাইন প্রশিক্ষণার্থী নিসান চন্দ্র দে। এই প্রশিক্ষণে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে লক্ষ লক্ষ টাকা ডিডি আত্মসাৎ করেছেন বলে জানান কম্পিউটার বিভাগের সহকারী প্রশিক্ষক মাসুদ রানা ।

ইয়ুথ কিচেন প্রশিক্ষণ কোর্সে অনিয়ম
নথি অনুযায়ী ১ মাস ’ইয়ুথ কিচেন’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ বরাদ্দ ছিল ২ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা। ১ মাস মেয়াদি কোর্স পরিচালনা এসইআইপি ট্রেইনার মোঃ রিয়াদ হোছাইন ও প্রশিক্ষক ( ইপসা) আরিফুল করিম। ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীর ২২০০ টাকা করে মোট ভাতা ৬৬ হাজার। তার মধ্যে প্রশিক্ষণার্থীদের ৪০% ভাতা ঠিক মত তিনি প্রদান করেননি। এই বিষয়ে ইয়ুথ কিচেন প্রশিক্ষণার্থী ইমরান হোছাইনকে ২২ শত টাকা ভাতার মধ্যে ১৭ শত টাকা প্রদান করেন বলে অভিযোগ করেন। প্রশিক্ষক সম্মানী ভাতা ৯২ হাজার ৫ শত টাকার মধ্যে ৪৪ টি ক্লাসের সম্মানী ৪৪ হাজার টাকার মধ্যে প্রশিক্ষক রিয়াদ হোছাইনকে ৬-৭ হাজার সম্মানী দেন, প্রশিক্ষক (ইপসা) আরিফুল করিমকে ৬ হাজার টাকা সম্মানী দেন উপ-পরিচালক। বাকী টাকার হদিস পাওয়া কঠিন , ভুয়া বিল, ভাউচার তৈরী করে উপকরণ ও বিবিধ খরচ দেখিয়েছেন এক লক্ষ ৫ শত টাকা।

ক্যাটারিং বিষয়ক প্রশিক্ষণে অনিয়ম
নথি অনুযায়ী ‘ক্যাটারিং’ বিষয়ক ১ মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা। এই কোর্স পরিচালনা করেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ফুড বিভাগের ইন্সট্রাক্টর আরিফুল করিম, এসএইআইপি বিভাগের প্রশিক্ষক মোঃ রিয়াদ হোসাইন ও ফুড এন্ড বেভারেজের প্রশিক্ষক শাহিন আক্তার। ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীর ২২ শত টাকা করে মোট ভাতা ৬৬ হাজার টাকার মধ্যে ৬০% ভাতার টাকাও পাইনি প্রশিক্ষণার্থীরা , ক্যাটারিং বিষয়ক প্রশিক্ষণার্থী রনি চাকমাকে ২২ শত টাকা ভাতার মধ্যে ১৬ শত টাকা দেওয়া হয় বলে তিনি জানান। সম্মানী ভাতা ৭৭০০০ হাজার টাকার মধ্যে প্রশিক্ষক আরিফুল ইসলাম , প্রশিক্ষক মোঃ রিয়াদ হোছাইন ও প্রশিক্ষক শাহিন আক্তারকে সর্ব মোট ৬৬ টি ক্লাসে সম্মানী হিসেবে ২৮ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে। ভুয়া ও বিল ভাউচার দেখিয়ে উপকরণ ও বিবিধ ব্যয় দেখিয়েছেন ৫০ হাজার।

ইলেকট্রনিক ও হাউজওয়ারিং সোলার প্যানেল স্থাপন” বিষয়ক কোর্সে অনিয়ম
নথি অনুযায়ী ইলেকট্রনিক ও হাউজওয়ারিং সোলার প্যানেল স্থাপন” বিষয়ক কোর্সে বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা। কোর্স পরিচালনায় প্রশিক্ষক ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ইলেকট্রনিকস বিভাগের ইন্সট্রাক্টর শাহ আলম, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর মোঃ আবু জাহিদ ও জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের (ভোকেশনাল) প্রশিক্ষক মোঃ আবুল কালাম। ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীর ভাতা ২২ শত টাকা করে মোট ৬৬ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু এই ভাতার টাকা ঠিকমত প্রদান করেননি বলে অভিযোগ প্রশিক্ষণার্থীরা। সম্মানী ভাতা ৯২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে ২২ টি ক্লাসের জন্য হেন্ড রাইটিংয়ে ২২ হাজার টাকা যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষক শাহ আলমের নামে নথিতে দেখানো হয়েছে। কিন্ত শাহ আলম কোন প্রশিক্ষণ সম্মানীর টাকা পাননি বলে প্রতিবেদককে জানান। অন্যদিকে একই কোর্সের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর মো: আবু জাহিদের নামে নথিতে ৩৩ টি ক্লাসের জন্য ৩৩ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা দেখানো হয়েছে। এই বিষয় জাহিদ জানায়, তাকে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৫০০ শত টাকা সম্মানী ভাতা দেন। বাকী টাকার কথা বললে তাকে হুমকি দুমকি দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।

বিউটিফিকেশন কোর্সে অনিয়ম
নথি অনুযায়ী ‘বিউটিফিকেশন’ কোর্সে বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ২০০০ টাকা । এই কোর্স পরিচালনা করেন প্রশিক্ষক মাইমুনা হাফসা ও সহকারী প্রশিক্ষক জান্নাতুল মাওয়া মহুয়া। ২০ জন প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা ৪৪ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে । কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত ভাতা প্রদান করেননি বলে জানান বিউটিফিকেশন কোর্সের অধিকাংশ প্রশিক্ষণার্থী। ১ম ব্যাচে প্রশিক্ষক মাইমুনা হাফসাকে ২০ হাজার ভাউচারে স্বাক্ষর করে ১০ হাজার টাকা সম্মানী ও সহকারী প্রশিক্ষক জান্নাতুল মাওয়া মহুয়াকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে ১০ হাজার টাকা ভাতা প্রদান করেন। ২য় ব্যাচ সহকারী প্রশিক্ষক জান্নাতুল ২জন প্রশিক্ষকের ক্লাস তিনি একা নিয়েছেন। ২জন প্রশিক্ষকের বেতন হিসেবে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে ১০ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা প্রদান করেছিল বলে জানান তিনি ।

সরকারী মালামাল নিলামে অনিয়ম
গত ২০-০৮-২০২৩ ইংরেজী তারিখে যার স্মারক নং-৩৪.০১.২২০০.০০০.১৮.০০১.১৩(অংশ-১)-৫১৪ ভিত্তিতে সকাল ১১ টায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি আহবান করা হয়েছে । এই নিলাম কমিটিতে কক্সবাজার সমবায় কর্মকর্তা , কক্সবাজার বিআরডিবি উপ-পরিচালক, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা , জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকসহ মোট ৫ জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রয়েছে । নিলামে নিয়ম অনুযায়ী ৫ জন সদস্যের স্বাক্ষরে নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন করার কথা থাকলেও তিনি নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কম্পোরেটিভ স্টেটমেন্ট তৈরী না করে অফিসের ভাল ও অকেজো জিনিস প্রায় লক্ষাধিক টাকার মালামাল তিনি তার ক্ষমতাবলে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। অন্যদিকে উপ-পরিচালক সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ হাসান আলী বাড়ি ভাড়া নিয়েও অনিয়ম করেন । তিনি প্রতিমাসে বাড়ি ভাড়া ভাতা পায় ২২.০৪৪ টাকা । তিনি সরকারী ভবনের পুরো একটি ফ্লাট ব্যবহার করেন । সরকারী ভাবে ২৫% বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করার কথা থাকলেও তিনি জুন ও জুলাই মাসের ডরমিটরী ভাড়া পরিশোধ করেন ১০%।

তিনি অবৈধ সম্পদ অর্জনে পিছিয়ে নেয়। সরকারী আত্মসাৎ এর টাকা ও বিভিন্ন ঘুষের টাকায় নিজের এলাকা চট্টগ্রামে করেছেন বিলাস বহুল বাড়ী , আভিজাত্য জীবন যাপনের জন্য বান্দরবান শহরে বান্দরবান ইউনিভার্সিটির অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কিনেছেন বিলাস বহুল ফ্লাট। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১ কোটি টাকা। নামে বেনামে ক্রয় করেছেন সম্পত্তি। একজন ৬ তম গ্রেড এর সরকারী কর্মকর্তা কিভাবে এত সম্পদের মালিক হল তা জনেমনে প্রশ্ন উঠে !
নাম জানাতে অনিচ্ছিুক এক কর্মকর্তা জানান, তিনি বান্দরবান উপ-পরিচালকের দায়িত্বপালন কালে তিনি সেখানেও ব্যপক অনিয়ম করে সরকারী টাকা আত্মসাৎ ও সরকারী কর্মচারী ও স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে বাজে ব্যবহার করেন । এবং তার দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভিন্ন হুমকি দুমকি দেন । তিনি আরো বলেন মহাপরিচালকের কথা বলে প্রশিক্ষণের টাকা আত্মসাৎ করেন । এই বিষয়ে বান্দরবানে তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রতিবেদন করেন । যার কারণে তিনি সেখান থেকে কক্সবাজার চলে এসেছেন। কক্সবাজারেও তিনি একই আচরণ করেন তার অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে ।

এই বিষয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আজাহারুল ইসলাম খানের সাথে কক্সবাজার অফিসের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করলে তিনি ব্যস্থ আছেন বলে কল কেটে দেন।

এই বিষয়ে যুব ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জাহেদ আহাসান রাসেলের পিএস মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন (উপ-সচিব) এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিব। এবং তিনি অনিয়ম দুর্নীতি করলে ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি জানান।

কক্সবাজার দুর্নীতি দমন কমিশন এর উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, আমি সঠিক প্রমাণাদি বা লিখিত অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি তিনি অনিয়ম বা সরকারী টাকা আত্মসাৎ করেন দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হবে ।

শেয়ার করুন

আরো বিভন্ন নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 somoybanglatv.com
Theme Customization By Monsur Alam