রামু সংবাদদাতাঃ
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হতে যাচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে। ১০০ কিলোমিটারের এই ডুয়েলগেজ রেলপথের মধ্যে ৭০ কিলোমিটারই এখন দৃশ্যমান। অর্থাৎ ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। বাকি ১৭ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হলেই মাত্র আড়াই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম থেকে স্বপ্নের ট্রেনে যাওয়া যাবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে।
শুরুর দিকে গত বছরের জুনে এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট মেয়াদে কাজ শেষ না হওয়ায় নতুন সময় নির্ধারণ করা হয় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। কিন্তু আগামী জুন মাসেও প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না। এখনও প্রকল্পের ১৭ শতাংশ কাজ বাকি থাকায় নতুন করে সেপ্টেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। যদিও গত ১৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। সাথে এটাও বলেছিলেন, কোনোভাবে সেটি সম্ভব না হলে বছরের শেষের দিকে কাজ শেষ হবে। প্রকল্প উদ্বোধনের মাধ্যমে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত ভ্রমণ করা সম্ভব হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। আর দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ রয়েছে। এই দোহাজারী থেকে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, রামু হয়ে বন-পাহাড় বেয়ে ও নদীর ওপর দিয়ে এই রেলপথটির নির্মাণকাজ করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মফিজুর রহমান বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ পুরোদমে চলছে। প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও করোনা মহামারীর কারণে গত বছরের জুনে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। তাই ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৮৩ শতাংশ (৩০ মার্চ পর্যন্ত) নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ট্রেন যাবে। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ছোটবড় ৩৯টি সেতুর মধ্যে প্রায় সবকটির নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। রেলপথের বিভিন্ন স্থানে ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হচ্ছে। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায়ও চলছে একটি উড়ালসেতুর নির্মাণকাজ। প্রকল্পের দোহাজারী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, চকরিয়া, রামুর অংশে রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। দোহাজারী থেকে ১০০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে সব মিলিয়ে ৭০ কিলোমিটার রেলপথ এখন দৃশ্যমান।
প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালীর নদীর ওপর সেতু নির্মাণকাজ শেষ। এছাড়া নয়টি স্টেশনের মধ্যে দোহাজারী, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও ও কক্সবাজারে স্টেশন নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। সাতকানিয়া ও রামুতেও স্টেশন নির্মাণকাজ চলছে। তাছাড়া লোহগাড়ার চুনতির পাহাড়ি এলাকায় হাতি চলাচলের জন্য ৫০মিটার দীর্ঘ ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। পাহাড় কেটে সমতল করে ওভারপাসটি নির্মাণ করা হচ্ছে। যাতে হাতি ও অন্যান্য প্রাণী তাদের চলাচলের পথটি স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দ্য মনে করে।
প্রকল্পের নথির তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে ৬ জুলাই দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। পরে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মেগা প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। পরবর্তী সময়ে অর্থায়ন সংক্রান্ত জটিলতায় বেশ কিছু দিন প্রকল্পটি থমকে থাকার পর ২০১৫ সালে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ওই বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়।
দোহাজারী-চকরিয়া এবং চকরিয়া-কক্সবাজার (লট-১ ও লট-২) এই দুই লটে চীনা প্রতিষ্ঠান সিআরসি (চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন) ও দেশীয় তমা কনস্ট্রাকশন্স কোম্পানি ২ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা এবং চীনা প্রতিষ্ঠান সিসিইসিসি ও দেশীয় ম্যাক্স কনস্ট্রাকশন্স ৩ হাজার ৫০২ কোটি টাকায় যথাক্রমে এক ও দুই নম্বর লটের কাজ পায়। পরে ঠিকাদার নিয়োগ হলে ২০১৭ সালে এই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।