কি এক পক্ষঘাতগ্রস্থতায় আমি নিয়ত বিধ্বস্ত,
আমি লিখতে গিয়ে কবিতা আজ লিখতে পারিনা।
কি যে এক আরষ্টতায় আমি প্রতিনিয়ত জর্জরিত,
আমার মাঝে বাস করে অক্ষমতা,দুর্বলতা,কাপুরুষতা।
আমি ভেবে ভেবেও অনেক কিছুই বলতে পারি না।
মানসম্মত হুশ মানেই তো মানুষ?
তাহলে আমি কি মানুষ নাকি ফানুস?
আমি নিজেই যেন নিজেকে বুঝতে পারি না।আমি আসলে কি!
আমি তো পশুবৎ নিকৃষ্ট এক নির্জীব,মেরুদণ্ডহীন প্রাণী।
ছি ছি ছি পশুকে আমি এত ছোট করছি কেন? ওদেরকে এত হেয় প্রতিপন্ন করছি কেন?
আমরা কি কুকুর কিংবা ঘোড়ার দিকে তাকিয়ে দেখতে পারি না !!
দেখুন না ওরা কত প্রভুভক্ত ও বিশ্বস্ত।
কিন্তু আমরা?
একদিনের পর দু’দিন – পান থেকে চুন খসলেই আমাদের চরিত্র ওলট-পালট হয়ে যায়। আবার আমরাই বলি;
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব!
সত্যি কি তাই!
শত ধিক।
আমি এ কথা বলতে গিয়ে যেন লজ্জিত হই বারংবার।
বোধ করি অন্য সব প্রাণীকুল আমাদের দেখে উপহাস করে।
ওদের কাছেও মনে করি আমরা বিষব্ৎ পরিত্যাজ্য।
কারণ প্রতিনিয়ত দেখতে পাই,
মানুষের মাঝেই মানবতা,মনুষ্যত্ববোধের সুতীব্র অবক্ষয়।
এই অবক্ষয় কৃষ্ণগহ্বরের মতো অতিশয় প্রকাণ্ড।
যা থেকে উত্তরণের যেন পথ নেই আর কোথাও!!
বাহ্!
নিজেদেরকে আমরা শ্রেষ্ঠত্বের আসনে উপবিষ্ট করি!
হায়েনা,বাঘ,সিংহের ন্যায় হিংস্র শ্বাপদের থেকেও তো আমরা নিকৃষ্ট।
কিন্তু মুখে বুলি আওড়ানো যে,আমরা মানুষ!
আমাদের আছে শানিত বিবেক, সুতীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার বাহার!
আমরা কি মনুষ্যত্ববোধের পরাকাষ্ঠায় বলীয়ান!!!
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ বিরাজিত কুৎসিত,বিভৎস আর ঘুনে ধরা মানসিকতা ।
আমি জেনে-বুঝে-শুনে সর্বত্র নিষ্ক্রিয়,নিশ্চুপ, নির্বিকার।
প্রতিবাদের ভাষা যেন লুপ্তপ্রায়।
আসলে আমরা এই মানব জাতি – জীবন্ত এক লাশের স্তুপ।
সকল অত্যাচার অনাচারেও যেন বাকরুদ্ধতা আর নিস্তব্ধতার প্রয়াস।
আমার মাঝে বিবেক, বুদ্ধি যেন তাড়া করে ফিরে না।
এখন আর নিজেকে মানুষ বলে ভাবতে পারি না,
অন্যায় অসঙ্গতি কিংবা সকল বৈকল্য যেন ঘাতসহ আর মানানসই।
বিশ্বময় যতই লয় প্রলয় হোক না কেন?
তাতেও তথৈবচ নীরব, নিথর, নিস্তব্ধ।
এ যেন নিত্য নৈমিত্তিক স্বাভাবিক ঘটনাক্রমের ধারা !
প্রকৃতপক্ষে আমরা পৃথিবীর কাছে আজ উচ্ছিষ্ট,অচ্ছুত,অপাংক্তে।ময়লা আবর্জনার এক তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত ভাঁগাড়।
এখন আর আমার চিন্তা শক্তিগুলো অপ্রতিরোধ্য নয়,
যেন বিক্ষিপ্ত,বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত।
কারণ আমি আর কবি নই।
তাই আমার আর লেখনী শক্তি ক্ষুরধার নয়।
আমার ইচ্ছে গুলো শৃঙ্খলিত যেন কয়েদখানায় বন্দী। আমার প্রত্যাশাগুলোও যেন অমাবস্যার অন্ধকারে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা।
ভাবনাগুলো দিনে দিনে যেন অনুর্বর আর উষরতায় পরিনত ।
বন্দীত্বের বন্দনা আজ আমার জীবনের গন্তব্য,
ক্ষুধিত পাষাণে অবরুদ্ধ আমার বিশ্বাস ও আস্থা।
জ্বলন্ত উনুনে ভিজে কয়লার ধুম্রজালে আমি নিয়ত আবদ্ধ।
বাধার প্রাচীর ডিঙিয়ে আমি কেন বলতে পারি না – আমি অপরাজিতা, আমি অপরাজিতা, আমি অপরাজিতা।।
নিশঙ্ক চিত্তে চিত্তে কেন আমি বলি না – আমি পারি,আমি পারি,আমাকে পারতেই হবে।
হিমঘরে বন্দী আমার সকল ভাবনার ভান্ডার।
আসলে আমি বধির,অন্ধ, মূক ও বিকলাঙ্গ।
তাই তো আমি সতত থাকি নিশ্চুপ,সংকুচিত, বিধান্বিত।
কারণ আমার যে আছে না পারার অপারগতা,অজ্ঞতা আর ব্যর্থতার সুবিশাল পরিসর।
সবকিছু বুঝেও যেন না বোঝার ভান,
আছে পেন্ডুলামের ন্যায় আদ্যোপান্ত দ্বিধা দ্বন্দ্বের দোলা।।
রচনাকাল:২৭.০৯.২০২৪।
রেহানা পারভীন
এডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।