কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকের জবকার্ডে মহিলা মেম্বার রেহেনা বেগমের স্বামীর বিকাশ নম্বর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা দাবির অভিযোগ মহিলা মেম্বারের বিরুদ্ধে। মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের সংরক্ষিত ৭,৮ ও ৯ ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার রেহেনা বেগমের স্বামী নুরুল আবছার গত শুক্রবার রাতে শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা দাবি করেন বলে জানান শ্রমিকরা। পরদিন শনিবারে মহিলা শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো কাজে আসলেও দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় তাদের উপস্থিতি না দেখিয়ে জবকার্ড ফেরত দেয় নুরুল আবছার। এবিষয়ে বাকবিতন্ডায় পরে অবশেষে চেয়ারম্যান আবু হায়দার বরাবর অভিযোগ দিতে সকাল সাড়ে দশটা – দুইটা পর্যন্ত চেয়ারম্যানের বাড়িতে অবস্থান করেন শ্রমিকরা। ওই সময়ে চেয়ারম্যান ঘুমে থাকায় কথা বলতে না পারলেও দুইটার পরে তাদের অভিযোগ জানানো হয় বলে জানান ভুক্তভোগী শ্রমিকরা।
সরজমিন তথ্য সংগ্রহে মহিলা শ্রমিকরা জানান- প্রতিদিনের মতো আমরা সকালে কাজ করতে আসি, শনিবারে পুরুষ শ্রমিকরা মগডেইল বাজারের পূর্বপাশে কবরস্থানে কাজ শুরু করেন। আমরা মহিলা শ্রমিক যেহেতু কবরস্থানে গিয়ে কাজ করতে পারবো না এজন্য আমাদেরকে অন্য কোথাও কাজে লাগানোর জন্য মহিলা মেম্বার রেহেনা বেগমের স্বামীকে অনুরোধ করি, দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় তিনি আমাদের কোন কথা না শুনে আমাদের জবকার্ড ফেরত দিয়ে দেয়। নিয়মিত কাজ করে যাওয়ার পরও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কেউ না হয়েও মহিলা মেম্বারের স্বামী নুরুল আবছার আমাদেরকে প্রতিদিন বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন। এর সুবিচারের জন্য চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিয়েছি তিনি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন। সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহে বেরিয়ে আসে মহিলা মেম্বার রেহেনার চাঞ্চল্যকর তথ্য।
স্বামীর মোবাইল নম্বর একজন হতদরিদ্র মহিলা শ্রমিক শাহেনা বেগমের জবকার্ডে দিয়ে গরীবের পারিশ্রমিকে ভাগ বসান দীর্ঘদিন থেকে। অথচ কাজের শুরুতে ওই মহিলা শ্রমিক নিজের মোবাইল নম্বর ০১৬০৯৪##৩৯৮ দিয়েছিলেন। ভুক্তভোগী শাহেনা জানান প্রতিবারই তার পারিশ্রমিক মহিলা মেম্বারের স্বামীর ০১৮৭৭১৯৯২২ এই নম্বরে আসার কারণে তার কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য টাকা নিয়ে নিতেন। ওই নম্বরের পরিবর্তে নিজের মোবাইল নম্বরে টাকা আসার জন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করায় মহিলা মেম্বার ক্ষুদ্ধ হয়ে সর্বেশেষ পারিশ্রমিকের বারো হাজার টাকা মহিলা মেম্বারের স্বামীর মোবাইলে আসলেও তাকে বারো পয়সাও দেয়নি বলে অভিযোগ করেন। ৯ নং ওয়ার্ডের সর্দার পাড়া গ্রামের ওই নারী জানান- দুই মেয়ে এক শিশু সন্তান নিয়ে অভাবের যেন শেষ নেই, স্বামী জীবিত থেকেও যেন বিধবা তিনি।
স্বামী মনির উদ্দিন তাদের কোন ভরণপোষণ না দেওয়ায় কর্মসৃজনের কাজের ফাঁকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করেন শাহেনা বেগম। অভিযোগের বিষয়ে মহিলা মেম্বার রেহেনা বেগমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান – তার বিরুদ্ধে স্থানীয় মেম্বার নুরুল আবছার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন, সংক্ষুব্ধ শ্রমিকদের পিছনে ইন্দন দিচ্ছেন তিনি । এবিষয়ে তিনি সাধারণ ডায়রি করবেন বলেও জানান। মহিলা মেম্বারের অভিযোগ নিয়ে ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল আবছারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান – নিয়ম মোতাবেক তিনি প্রকল্প কমিটির সভাপতি হয়েছেন এক্ষেত্রে আমি কেন ষড়যন্ত্র করবো? আমাদের সকলের উদ্দেশ্য সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা। তিনি কোন কারণে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন তা বুঝতেছি না। তবে মহিলা মেম্বার রেহেনা বেগম আচার-আচরণে কেমন তা পরিষদ সংশ্লিষ্ট সবাই অবগত আছেন।
মহিলা মেম্বার কতৃক টাকা দাবির বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান আবু হায়দারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান -শ্রমিকরা এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াছিন এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান – মহিলা মেম্বার রেহেনা বেগম তাঁকে ফোন করে শ্রমিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন, স্থানীয় মেম্বার নুরুল আবছার তার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের লেলিয়ে দিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন বলে দাবি করেন মহিলা মেম্বার । বিস্তারিত জানতে চেয়ারম্যান আবু হায়দারকে ফোনে না পাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছেন বলে জানান ইউএনও মহেশখালী। সচেতন মহল বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে গরীবের পারিশ্রমিকে ভাগ বসানো জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।