1. newsiqbalcox@gmail.com : Somoy Bangla : Somoy Bangla
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন

র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু, বাদীর কথার সঙ্গে এজাহারের গড়মিল

ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩
  • ১০৮ ভিউ সময়

 

রাজশাহী ব্যুরো:

 

র‌্যাবের হেফাজতে নওগাঁর ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক সুলতানা জেসমিন (৪৫) মৃত্যুর ঘটনায় বাদী ও স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এনামুল হকের বিরুদ্ধেই রয়েছে প্রতারণার মামলা। এছাড়াও ২০১৮ সাল-২০২০ সাল পর্যন্ত তিন বছর ওএসডি ছিলেন ওই কর্মকর্তা। অথচ এনামুলের মৌখিক অভিযেগের পরিপ্রেক্ষিতেই তাঁর উপস্থিতিতে র‌্যাব জেসমিনকে তুলে নিয়ে আসে কোনো মামলা ছাড়ায়। এর পর র‌্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয় জেসমিনের। অপরদিকে গত মঙ্গলবার দুপুরে মামলার বাদী ও স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক এনামুল হক সিল্কসিটিনিউজের কাছে জেসিমন মৃত্যুও ঘটনার পেছনে যে বর্ণনা দিয়েছেন ডিজিটাল আইনে তিনি বাদী হয়ে দায়েরকৃত মামলাটির ব্যাপক গড়মিল পাওয়া গেছে।

এনামুল দাবি করেছেন, তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছে হ্যাকাররা। কিন্তু টাকা লেনদেন হয়েছে জেসমিনের ব্যাংক হিসেবে। তবে হ্যাকারদের বিরুদ্ধেই তাঁর মূল অভিযোগ ছিল। কিন্তু জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত। তিনি শোকাহত। তাহলে মামলায় উল্লেখকারী হ্যাকার আল আমিনকে না ধরে, আগে জেসমিনকে কেন গ্রেপ্তার করতে গেল র‌্যাব-এমন প্রশ্নের জবাবে বাদী এনামুল হক বলেন, আমি শুধুমাত্র মৌখিক অভিযোগ দিয়েছিলাম র‌্যাব রাজশাহীর কর্মকর্তার কাছে। এর পর তারা পরবর্তি ব্যবস্থা নিয়েছে। এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না। পরে আমি মামলা করেছি, মামলা তদন্ত চলছে। তদন্তেই সঠিক বিষয়টি উঠে আসুক আমিও চাই।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর জিন্নাহ নগর এলাকার বাসিন্দা ও ২০ তম বিসিএস ক্যাডার থেকে বর্তমানে যুগ্ম-সচিব পদমর্যদা পেয়েছেন এনামুল হক। তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে বলে গত বছরের ২৭ মার্চ রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি জিডি করেছিলেন তিনি। ওই জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, আমার ফেসবুক আইডিটি হ্যাক হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো। এর বেশি কিছু তিনি ওই জিডিতে উল্লেখ করেননি বলে জানিয়েছেন রাজপাড়া থানার একজন দায়িত্বরত কর্মকর্তা। এর পর গত বছরের অক্টোবরে এনামুলের বিরুদ্ধে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় ছন্দা জোয়ারদার নামে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পরবর্তিতে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে নেন এনামুল হক।

অন্যদিকে নিহত জেসমিনের ছোট ভাই সোহাগ হোসেন এবং ছেলে সাহেদ হোসেন সৈয়কত অভিযোগ করেছিলেন আটকের নামে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে সুলতানা জেসমিনকে। যদিও তারা এসব বিষয় নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাননি গণমাধ্যমের কাছে। পরিবার সূত্র মতে, ঘটনার পরে জেসমিনের পরিবার এখন চরম আতঙ্কিত। এ কারণে তাঁরা কেউ আর মুখ খুলতে চাইছে না। এমনকি মামলাও করতে চাইছেন না।

অপরদিকে গত মঙ্গলবার দুপুরে মামলার বাদী ও স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক এনামুল হক সিল্কসিটিনিউজের কাছে জেসিমন মৃত্যুও ঘটনার পেছনে যে বর্ণনা দিয়েছেন ডিজিটাল আইনে তিনি বাদী হয়ে দায়েরকৃত মামলাটির ব্যাপক গড়মিল পাওয়া গেছে।

এনামুল হক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের দিকে আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল। ওই আইডি হ্যাক করে আমার পদমর্যদা ব্যবহার করে হ্যাকাররা অনেককেই চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। এরই মধ্যে দুজন ব্যক্তি সম্প্রতি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। এর পর আমি থানায় জিডি করি তবে তাতে কোনো সাড়া না পেয়ে রাজশাহী র‌্যাব কর্মকর্তাদের বলি। পরবর্তিতে তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে দুজনকে খুঁেজ বের করে র‌্যাব। হ্যাকাররা টাকা আদায়ের জন্য জেসমিনের ব্যাংক একাউন্টের চেক বইয়ের পাতা দিয়েছিল। যে চেক বইটি ছিল জেসমিনের সেলারি একান্টের চেক। এর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় র‌্যাব জেসমিনকে খুঁজে বের করে। তাঁর একাউন্টে ১৯ লাখ টাকা লেনদেনেরও প্রমাণ পাওয়া যায়।’

এনামুল বলেন, ‘জেসিমনকে আটকের পরে তাঁর মোবাইলের ম্যাসেঞ্জারে হ্যাকার চাঁদপুরের হাইমচরের আল আমিনের সঙ্গে অনেক চ্যাট করার প্রমাণ পেয়েছে র‌্যাব। তাতে অনেক অশ্লিল কথাও ছিল। এতে প্রতিয়মান হয় আল আমিনের সঙ্গে প্রেম ছিল জেসমিনের। সেই সূত্র ধরে আল আমিন আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে জেসমিনের ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে টাকা আদায় করতো প্রতরণা করে।’

এক প্রশ্নের জবাবে বাদী এনামুল হক বলেন, ‘আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি চেয়েছিলাম। এটা চাইনি (জেসমিনের মৃত্যু)। যেটি ঘটেছে, সেটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। এর জন্য আমি শোকাগত। ওই আমারই কর্মচারী ছিল। সেটি আমি পরে জেনেছি। আগে পরিচয় ছিল না। কিন্তু তার অপরাধের কারণে আমি তাকে সিমপ্যাথি দেখাতে পারি না। আমিও তো ভূক্তভোগী। আমার নাম করে অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আমার ফেসবুক হ্যাকড করা হয়েছে।’

বাদী এনামুল দাবি করেন, দৈনিক পুনরাত্থনারে বরিশাল জেলা প্রতিনিধি শেখ আরিফ এবং ঢাকায় যুব উন্নয়ন প্রযেক্টে চাকরি করেন সাকুর নামের দুই ব্যক্তি প্রতারণার শিকার হতে গিয়ে তাঁরা বিষয়টি এনামুল হককে অবগত করেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে এনামুলের ফেক ফেসবুক আইডি থেকে তাঁদের নিকট টাকা দাবি করেছিল হ্যাকাররা। তবে এনামুলের দেওয়া মোবাইল নম্বর ধরে যোগাযোগ করা হলে বরিশালের শেখ আরিফের কথার সঙ্গেও গড়মিল পাওয়া যায়।

শেখ আরিফ দাবি করেন, অনেক আগ থেকেই ফেসবুকে পরিচয় ছিল এনামুল হকের সঙ্গে। সেই সুবাদে নতুন একটা আইডি থেকে আমাকে পুলিশে চাকরির প্রলোভন দেয় হ্যাকাররা। এরপর বিষয়টি সন্দেহ হলে আমি রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের অফিস থেকে স্যারের নম্বর নিয়ে তাঁকে বিষয়টি অবগত করি। এর পর তিনি জানান, ওই আইডিটি ফেক। পরে আমি কৌশলে হ্যাকারের নিকট থেকে টাকা দেওয়ার জন্য ব্যাংকের চেক বইয়ের পাতা নেই। এর পর এনামুল স্যার র‌্যাবের সহায়তায় এক নারীকে আটক করা হয় বলে শুনেছি।’ মেখ আরিফের এই বক্তব্যেও সঙ্গেও এনামুলের বক্তব্যেও গড়মিল লক্ষ্য করা গেছে।

অন্যদিকে ঢাকার সাকুর খান বলেন, ‘৪-৫ মাস আগে এনামুল স্যারের ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে আমার কাছে প্রতারণার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর পর এনামুল স্যারের কথা মতো র‌্যাব হেড কোয়ার্টারের এক কর্মকর্তার কাছে আমি সকল তথ্য দিয়ে আসি। এর পর কি হয়েছে আমি জানি না।’ সাকুর খানের এ বক্তব্যের সঙ্গেও এজাহারে এনামুলের বর্ণিত বক্ত্যের কোনো মিল পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুগ্মসচিব এনামুল হক বলেন, ঘটনাটি তদন্তাধীন। যা এজাহারে বলেছি, সেটি আমারই বক্তব্য। এজাহারের কোনো কথা বলতে চাই না।’

যদিও এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, গত ২০ মার্চ বাদী স্থানীয় সরকার বিভাগ রাজশাহীর পরিচালক এনামুল হক অফিসে থাকাকালীন তাঁর উচ্চমাণ সহকারী জামাল তাঁকে জানান যে, মোবাইলের সাহায্যে কে বা কাহারা তাঁর পরিচয়-পদবি ব্যবহার করে ফেসবুক ফ্যাক আইডি খুলে বিভিন্ন লোকজনদের চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণামূলক ভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এবং এনামুলের বিভিন্ন সময়ে সরকারী কাজ বাস্তবায়নের বিভিন্ন ফটো সেশন সমূহ ফেক আইডির মাধ্যমে শেয়ার করে জনমনে প্রতারণামূলক বিশ্বাস জন্ম দিয়ে বিভিন্ন ভাবে লোকজনদের ঠকাচ্ছে। গত ২০ মার্চ তাঁর অফিসের সামনে আনুমানিক সকাল ১০ টা হতে বেলা-১২ টার মধ্যে এনামুলের পরিচয় ব্যবহার করে চাকুরি দেয়ার নামে প্রতারণা করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়াছে।

বিষয়টি বাদী জানতে পেরে ১ নম্বরর আসামী মোঃ আল আমিন (৩২) ও ২নম্বর আসামি মোছাঃ সুলতানা জেসমিনের সহযোগীতায় সুকৌশলে অনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় আমার পরিচয় ও পদবী খুলিয়া বিভিন্ন লোকজনকে চাকুরী দেওয়ার নাম করে প্রতারনামূলক ভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গত ২০ মার্চ বাদী অফিসিয়াল কাজে নওগাঁ জেলার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বেলা অনুমান ১১ টা ১৫ মিনিটের সময় নওগাঁ বাসস্টান্ডে র‌্যাবের ১টি টহল দলকে দেখতে পান বাদী। এর পর টহল দলের ইনচার্জ এবি এম মাসুদের নিকট উল্লিখিত অপরাধজনক ঘটনার বিস্তারিত বিষয় অবহিত করেন বাদী। র‌্যাব পরবর্তিতে প্রযুক্তির সাহায্যে ২নম্বর আসামি মোছা সুলতানা জেসমিনের (৪০) অবস্থান নির্ণয় করে তাকে আটক করে।

মামলার এমন বর্ণনা এবং বাদীর কথার সঙ্গে গড়মিল বিষয়ে র‌্যাবের কর্মকর্তা মেজর নাজমুস সাকিব বার বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে নগর পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘বাদী এজাহারে যা লিখিছেন, সেটি ধরেই আমরা তদন্ত করব। এর বাইরে কিছু ঘটলে সেটিও বের হয়ে আসবে।’

শেয়ার করুন

আরো বিভন্ন নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 somoybanglatv.com
Theme Customization By Monsur Alam