বিশেষ প্রতিনিধি
মহাসড়কে কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না কক্সবাজার পৌরসভার খাস খালেকশনের নামে চাঁদাবাজি। এবার মহাসড়ক ছাড়িয়ে শহরজুড়ে অবৈধ সিএনজি স্টেশন থেকে গণহারে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। এই চাঁদাবাজির নেতৃত্বে রয়েছে কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর সালাহউদ্দিন সেতু ও ওমর ছিদ্দিক লালু। তাদের দমাতে পারছে না কেউ। সম্প্রতি চাঁদাবাজি বন্ধে ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৫ জন চাঁদাবাজকে আটক করে। কিন্তু এর পরদিনই আবারও জ্যামিতিক হারে চাঁদাবাজি শুরু হয়। তবে এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভা মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, পৌরসভা কাউকে ইজারা দেয়নি। এটি আইনশৃঙ্খলা বৈঠকেও বলা হয়েছে। পৌরসভার নামে যারা চাঁদা আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলেও পৌর মেয়র হস্তক্ষেপ করবেন না বলে জানিয়েছেন।
জানা যায়, পৌর টোল আদায়ের নামে কক্সবাজার পৌরসভার বিরুদ্ধে এই চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালের পরে ঢাকা—কক্সবাজার মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে গণহারে জোরপূর্বক এই চাঁদাবাজি চলছে। যার কারণে যানজটের পাশাপাশি বাড়ছে দুর্ঘটনা। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পৌর কর্তৃপক্ষের নামে এ চাঁদা আদায় চলছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। জানা যায়, এখান থেকে প্রতিমাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। তারমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার মহাসড়কে চলাচলরত ট্রাক প্রতি দৈনিক ৫০—১০০ টাকা, পিকআপ ২৫—৫০ টাকা, কাভারভ্যান ৫০—১০০ টাকা, ডাম্পার ২০—৪০ টাকা, মিনি পিকআপ ২০—৫০ টাকা, এসি বাস ৬০ টাকা, নন এসি ৪০ টাকা মিনি বাস ৩০ টাকা, নোহা লোকাল ৪০ টাকা, বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বাস থেকে ৫০—১০০ টাকা ও কার প্রতি নেওয়া হয় ৫০ টাকা। এছাড়া বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পর্যটন সিজনে দুই থেকে তিনগুণ বেশী টাকা আদায় হয় প্রতিদিন।
বাস চালকেরা বলেন, কক্সবাজার বাসটার্মিনালে পর্যপ্ত যানবাহন পার্কিং ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ গাড়ি পার্কিং করতে হয় রাস্তার উপর। তারপরও পৌরসভার নামে টোল আদায় করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে যানবাহন দাঁড় করিয়ে রশিদের মাধ্যমে টোল নেওয়ার নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। টাকা না দিলে প্রতিনিয়ত ড্রাইভার ও সাধারন যাত্রীদের মারধরও করা হচ্ছে। এ জন্য রাখা হয়েছে লাঠিয়াল বাহিনী। স্থানীয়রা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির কারণে বেশ কয়েক বার এসব টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করা হয়েছিল। এমনকি কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছিল টোল উত্তোলন করা অবস্থায়। কিন্তু কিছু দিন পর আবারও টোল আদায় করতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টোল আদায়ে জড়িত এক ব্যাক্তি বলেন, একসময় টোল আদায়ের জন্য কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হলেও দীর্ঘদিন ধরে সেটি বন্ধ রয়েছে। এখন যে টোল আদায়
করা হচ্ছে মূলত সেটি পৌরসভার খাস কালেকশন হিসাবে আদায় করা হচ্ছে। আর এসব খাস কালেকশনের দায়িত্বে রয়েছে পৌরসভায় ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালাউদ্দিন সেতু ও ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ছিদ্দিক লালু‘র নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট। জানা গেছে, সড়ক বা মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে টোল আদায় বন্ধ করতে হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নং— ৪৬/৪০/২০২২ মোতাবেক ২১ এপ্রিল এক আদেশে বাস টার্মিনাল ব্যতিরেকে কোনো সড়ক বা মহাসড়ক থেকে টোল উত্তোলন না করার জন্য দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়রদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ—সচিব মোহাম্মদ আবদুর রহমান ২৫ সেপ্টম্বর এক পরিপত্রে এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পৌরসভার বিধানের ৯৮ ধারার ৭ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে শুধুমাত্র পৌর মেয়র নির্মিত টার্মিনাল ছাড়া পার্কিং ফির নামে টোল আদায় সম্পূর্ণ অবৈধ। অথচ বছরের পর বছর ধরে কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পৌর বাস টার্মিনাল টোল আদায়ের রসিদ দিয়ে মহাসড়কের একাধিক স্থানে চাঁদা উত্তোলন করছে। এ অবৈধ টোল আদায়ের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সিটি এলাকা, জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকার সকল প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। টার্মিনালের বাইরে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে টোল আদায় অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা মানছে না কক্সবাজার পৌর কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে কাউন্সিলর সালাউদ্দিন সেতু বলেন, এটি চাঁদাবাজি নয়। পৌরসভার নামে খাস কালেকশন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন কেউ যদি মহাসড়কে টোলে নামে চাঁদাবাজি করে তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।