মহেশখালী প্রতিনিধিঃ
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ইয়াছিন গত ৪ নভেম্বর (শুক্রবার) দুপুরে দিকে এক বিতর্কিত ১৫ মামলার আসামী শীর্ষ সন্ত্রাসী মেয়ের বিয়ের অনুষ্টানে ভূরিভোজে অংশ করেছেন। এ নিয়ে উপজেলাজুড়ে চলছে সমালোচনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ইউএনও হত্যা,ডাকাতি, অস্ত্র,মারামারি,হত্যা চেষ্টা, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্যা মামলায় দীর্ঘ দিন কারাভোগ করা জেল ফেরৎ উপজেলার ধলঘাটার মহুরী ঘোনার বাসিন্দা আন্তঃ জেলার তালিকাভূক্ত ডাকু ফজল কাদেরের মেয়ের বিয়ে চকরিয়া গিয়ে ভূরিভোজে অংশ গ্রহণ করে সন্দেহের সৃষ্টি করেছেন।
বিয়ে উপলক্ষে পরেছিলেন কালো রঙের পাঞ্জাবি। কিন্তু থানার তালিকাভুক্ত ডাকাতের সঙ্গে ভাতের টেবিলে বসা ও দুইজনে আলাদা সৌহার্দপূর্ণ এক ফ্রেমে কিছু ছবি তোলে ফজল কাদের নিজের নামিয় ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট দেন।
পোষ্টের ছবিতে দেখা যাচ্ছে ইউএনওর ভাতের টেবিলে পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন ফজল কাদের।
মুর্হুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ায় নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে এই গুণধর কর্মকর্তা বিরুদ্ধে। একজন ডাকাতের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি দেখে সমালোচনা করছেন অনেকে। এখানে শেষ নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউএনও’র গাড়ি চালক আবু বক্কর দুই বছর আগে বিদেশ গিয়েছিল। সেখান থেকে অল্প দিনের ভেতরে ফের রহস্যজনক ভাবে দেশে ফিরে আসে। দেশে ফেরার পর তখন মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরকারী গাড়ি চালক না থাকায় আবু বক্করকে মাস্টাররোলে চালক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
অভিযুক্ত আবু বক্করের বাড়ি মহেশখালী পৌরসভার পুটিবিলা খুইশ্যামার পাড়া গ্রামে। সে ওই গ্রামের মৃত বাদশা মিয়ার পুত্র।
এদিকে মাস্টারোলে চাকরিতে ইউএনও’র গাড়ি চালক আবু বক্কর মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতন পান বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসনের একটি সূত্র।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ইউএনও’র ব্যাক্তিগত গাড়ি (সরকারী গাড়ী) চালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠে চালক আবু বক্কর। আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়ার মতোই টাকার পাহাড় গড়ে উঠতে থাকে তার। মূলতঃ এসব অবৈধ কাজে উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব থাকে আবু বক্করের উপর। তথ্য বলছে, দেড় বছর আগে টাকার অভাবে চাকরি খোঁজা আবু বক্কর এখন ২২ লাখ টাকা দামের দুটি ডাম্পার গাড়ির মালিক। সেই গাড়ি গুলো রাতের অন্ধকারে পাহাড় কেটে, সরকারী ছড়া সেচে বালি ও মাটি এনে বিভিন্ন স্থানে পাচার ও বিক্রি করছে অনায়াসে। আর এসব কাজ করা হয় লোকচক্ষুর আড়ালে গভীর রাতে।
স্থানীয়রা জানান- মহেশখালীতে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বালি, মাটি, ইট, গাছ সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহের কাজে দুটি ডাম্পার গাড়ি ব্যবহৃত হয়। এই দুটি ডাম্পার গাড়ি ইউএনও নিজে কিনে তার ব্যক্তিগত গাড়ী চালকের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন বলেও একাধিক সুত্র মনে করছেন। কিছু কিছু সূত্র এসব গাড়ি খোদ ইউএনও কিনে ড্রাইভারের মাধ্যমে তদারকি করছেন বলে মনে করেন। তবে গাড়ি কেনা সংক্রান্ত কাগজপত্র সৃষ্টি করা হয় ড্রাইভার আবু বক্করের নামে।
ইউএনও’র নাম ভাঙ্গিয়ে মহেশখালীতে দুটি ডাম্পার চলছে নিশ্চিত করে অন্যান্য ডাম্পার চালক ও মালিকরা জানিয়েছেন- ইউএনও’র ব্যক্তিগত গাড়ি চালক আবু বক্কর গাড়ি দুটি পরিচালনা করেন। তার নিজের বাড়ির সামনে গাড়ির গ্যারেজও তৈরী করেছে সে।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক আবু বক্কর জানান, গাড়ি দুটো তিনি কিনেছেন। টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেয়নি। এদিকে চালক আবু বক্কর ২২ লাখ টাকা দিয়ে ডাম্পার গাড়ি কিনেছে এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এত কম সময়ে আবু বক্কর কিভাবে এত টাকার মালিক হলো সেই প্রশ্ন সবার কাছে!
এলাকাবাসী জানান, বিগত জোট সরকারের আমলে ফজল কাদের তিনি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে গড়ে তোলেন নিজস্ব ডাকাত দল। তাঁর বিরুদ্ধে মহেশখালী থানাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি নিজেকে হাফ ছেড়ে বাঁচতে বোল্ট পাল্টিয়ে মোটা অংঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ইতিমধ্যে নাম লিখিয়েছেন ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের আহবায়ক হিসাবে।
শ্রমিক লীগে নাম লিখার পর তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করে এলাকায় একের পর এক করে যাচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। যার কারণে তৃর্ণমূলের ত্যাগি আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। দ্বীপের অধিকাংশ
সন্ত্রাস বিরোধী মামলার আসামিরা ধলঘাটাকে নিরাপদ মনে করে তাঁর আশ্রয়ে এলাকায় দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সন্ত্রাসীদের তিনি আশ্রয় দিয়ে আসছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি রাতে তাঁর বাড়িতে বিভিন্ন মামলার আসামিরা ঘুমাতে যান। তাঁর মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে ইউএনওর গোপন বৈঠক ও ভূরিভোজে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ডাকাতের মেয়ের বিয়ের অনুষ্টানে অংশ গ্রহণের বিষয়ে ইউএনও কে বেশ কবার ফোন করেও সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সংবাদে তা সংযোজন করা হবে।
####