কুতুবদিয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন কাগজপত্র বানিয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক ও অন্যান্য একাধিক কার্যালয় থেকে ভাতা উত্তোলণ করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে আফরোজা বেগম প্রকাশ নাছিমা নামের এক নারীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে কুতুবদিয়া সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই নারীর বিরুদ্ধে সিআর-৩৭৪/২২ মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী মোঃ মনির। জানা যায়, ওই নারী উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের কুইলার পাড়ার নাজের হোছাইনের স্ত্রী।
মামলা সূত্রে জানা যায়, মোঃ মনিরের আছিয়া বেগম নামের তার এক অবিবাহিত মেয়ে রয়েছে। সে এবার দাখিল পরীক্ষা দিয়েছে। আসামি জালিয়িতির মাধ্যমে অবিবাহিত মেয়ের ছবি ব্যবহার করে নাম পরিবর্তন পূর্বক (ডেজি আকতার) আসামির ভাইকে (নাছির উদ্দীন) স্বামী উল্লেখ করে একটি ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয় থেকে পুষ্টি ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে। এমনকি মিজানুর রহমান নামের এক ছেলে সন্তানের নামেও একটি ভূয়া প্রতিবন্ধী কার্ড বানিয়ে ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে এ নারী।
নাছিমা নামের ওই মহিলা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জাল জালিয়াতির সাথে জড়িত। এরইমধ্যে এলাকার একাধিক নারী-পুরুষের নামে বয়ষ্ক ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড বানিয়ে উপজেলার মহিলা বিষয়ক কার্যালয় থেকে পুষ্টি ভাতা এবং অন্যান্য কার্যালয় থেকেও বিভিন্ন ভাতা নগদ ও বিকাশ নাম্বারে উত্তোলণ করে আত্মসাৎ করেছেন।
এর আগে মামলার বাদি মোঃ মনির এ নারীর জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। ইউএনও বিষয়টি তদন্তের জন্য সমাজসেবা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া দেন। দায়িত্ব পেয়ে গত ২৭ জুলাই উত্তর ধুরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, প্যানেল চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বাদি-বিবাদিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় জাল জালিয়াতির সত্যতা পাওয়া যায়। আসামীর পরিবারে ২০ টি ভূয়া প্রতিবন্ধী কার্ড এর তালিকা পাওয়া গেছে বলে মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়।
মামলার বাদি মনির বলেন,আসামি আফরোজা বেগম প্রকাশ নাছিমাগং জাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণা করে সরকারি অফিস থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে আমার দীর্ঘদিনের চলাচল রাস্তাটি হঠাৎ বন্ধ করে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি অবহিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ
(ওসি)’কে নির্দেশ দেন। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশ বরাবর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
মামলার আইনজীবী এড.রাসেল সিকদার জানান, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আসামি মামলার সংশ্লিষ্ট (৪৬৩/৪৬৪/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৫০৬ (||) ধারায় অপরাধ করেছেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য কুতুবদিয়া থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
কুতুবদিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের প্রশিক্ষক (অঃদাঃ) জাকির হোসেন বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে কেউ সুবিধা নিয়ে থাকলে তা সুনির্দিষ্ট অর্থ বছরের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বের করা সম্ভব। তবে এর দায়ভার সংশ্লিষ্ট পরিষদের উপর বর্তাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের ৩৯৩ ডকেট নং মূলে একটি অভিযোগ তদন্তকালে উভয় পক্ষের সমস্যা খুঁজে পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযুক্ত নারীর এক পরিবারে প্রায় দশজন সদস্যের নামে প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন ভাতার কার্ডের সত্যতা পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের দেয়া তালিকা মতে অফিসে বিভিন্ন ভাতা ভোগীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উত্তর ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল হালিম সিকদার বলেন, তৎকালীন সময়ে ওই নারী বিভিন্ন জাল জালিয়াতির মাধ্যমে যে সব ভাতার কার্ড নিয়েছিল সেগুলো যাচাই-বাছাই করে পরিষদ থেকে বাতিল করা জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, একটি পারিবারিক সমস্যাকে ঘিরে এসব সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ঘরে ঘরে হানাহানী। এতে উভয় পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেঁচো কুড়তে বেরিয়ে আসছে সাপ।
এদিকে আদালতে মামলা করায় বাদিকে ধুরুং বাজারে মারধরের চেষ্টাসহ আসামি বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।