1. newsiqbalcox@gmail.com : Somoy Bangla : Somoy Bangla
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৬ অপরাহ্ন

চট্টগ্রামে ছোট বোনের দেবরের বিরুদ্ধে ভাবীর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ

ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২
  • ৩০৪ ভিউ সময়

রাসেল চৌধুরী :

চট্টগ্রামে ছোট বোনের দেবরের বিরুদ্ধে ভাবীর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে। জানা যায় বোন গোল নাহার বেগমের দেবর মোহাম্মদ সেলিম
নগরীর এনায়েত বাজারস্থ ২২ নং বাটালী রোডের বাসিন্দা ইয়াসমিন আক্তারের পৈত্রিক বসত ভিটা ও ফ্ল্যাটের একজন ভাড়াটিয়া হলেও এখন নিজের দাবী করে দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

সেলিম দীর্ঘ ১১ বছর ইয়াসমিন আক্তারের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করলেও বড় ভাই শাহীনের মৃত্যুর পর নিজেকে ফ্লাটের মালিক দাবী করেন। একিসাথে ভাইয়ের অসহায় পরিবারকে জিম্মি করে ভাবীর সম্পত্তি ও রেয়াজউদ্দিন বাজারের দোকান তার নামে লিখে পায়তারাসহ নির্যাতনের অভিযোগ উঠে দেবর সেলিমের উপর।
জানা যায়, নগরীর এনায়েত বাজারস্থ ২২ নং বাটালী রোডের বাসিন্দা রফিক আহমদের জৈষ্ঠ্য কন্যা ইয়াসমিন আক্তার। রফিক আহমদের ৪ কন্যা ইয়াসমিন, রোজি, ডলি, গুলনাহার ও ছেলে মোর্শেদ। ৫ জানুয়ারী ২০১৫ সালে বাবা রফিক আহমদের মৃত্যুর পর অপরাপর বোনদের ন্যায় ইয়মিন আক্তার পৈত্রিক সম্পত্তি বিএস ৬৪৯ খতিয়ানের ১ কাঠা বা ১৬৭ শতাংশ বসত ভিটার মালিক হন। সেই মময় থেকে ইয়াসমিন আক্তার স্বামী সন্তানসহ উক্ত পৈত্রিক বসত ভিটাতে বসবাস করে আসছিলেন।
২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ইয়াসমিন আক্তারের আর্থিক অবস্থা অপরাপর বোনদের থেকে অস্বচ্চল, তিনি ও তার স্বামী ফরিদ আহমদ সংসার আর চাকুরী নিয়ে ব্যস্ত থাকায় উক্ত ১ কাঠা বা ১৬৭ শতাংশ বসত ভিটা শাসন, সংরক্ষন, বিক্রয়, হস্তান্তর, দখল সনাক্তের জন্য সীমানা ও চৌহদ্দি নির্ধারণ ও উন্নয়নের জন্য ছোট ভগ্নিপতি গুলনাহারের জামাতা মোহাম্মদ শাহীনকে সাধারণ আমমোক্তার নিযুক্ত করেন।

একি তারিখে  রেজিষ্ট্রীকৃত সাধারণ আমমোক্তারনামা দলিল চুক্তিপত্র ১৬৯৯৩ অনুযায়ী শাহীন স্বত্ববান ও দখলদার। একই দিনে অপর এক দলিল নং ১৬৯৯৪ মূলে ইয়াসমিনের প্রপ্ত ১ কাটা বসত বিটাতে ৫ তালা ফ্ল্যাট নির্মানের চুক্তি সম্পাদিত হয় শাহিনের সাথে। শাহিন চুক্তি অনুযায়ী ফ্ল্যাট নির্মান শুরু করেন। ২ তলার কাজ সম্পূর্ণ করার পর শাহীনের মৃত্যু হলে বাকী কাজ আর এগিয়ে নিতে পারেননি ইয়াসমিন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১২ সালের সালের দিকে ইয়াসমিন ও তার স্বামী ফরিদ আহমদ তাদের ফ্ল্যাটের ২য় তলা ভাড়া দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় ইয়াসমিনের ছোট বোন গুলনাহারের দেবর শাহীনের ভাই সেলিম ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেওয়ার জন্য প্রস্তাবনা দেন। ইয়াসমিন-ফরিদ দম্পত্তি আত্মীয়তার খাতির ২০২১ সালে ৭ হাজার টাকা মৌখিক ভাড়া ধার্য্য করে সেলিমকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন।

২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাড়াটিয়া হিসেবে সেলিম ভাড়া পরিশোধ করে আসছিলেন। বৈশ্বিক মহামারী করোনা সময় ২০২১ সালের শুরু থেকে সেলিম ভাড়া প্রদান থেকে বিরত থাকেন।  ইয়াসমিন আত্মীয়তা ও মানবিক দিক বিবেচনা করে ভাড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেননি সেলিমের উপর।

সেলিম ইয়াসমিনের সরলতাকে পুঁজি করে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও নান অজুহাতে ফ্ল্যাট ভাড় প্রদান থেকে বিরত থাকেন প্রায় ২২ থেকে ২৩ মাস ধরে।

ইয়াসমিন ও তার স্বামী ফরিদ জানান প্রতিবেদেককে জানান, তারা বারবার সেলিমকে ফ্ল্যাট ভাড়া প্রদানের জন্য তাগাদা দিলেও সে মাস দুয়েক পরে দিবেন বলে তাল বাহানা করতে থাকেন।এভাবে চলতে থাকে প্রায় দেড় বছরের অধিক সময়। নিরূপায় হয়ে তারা একপর্যায়ে সেলিমকে ভাড়ার ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করলে সেলিম তাদের সাথে খারাপ আচরণ,  নান রকম ভয় ভীতি প্রদর্শন ও জানে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করেন।

সেলিমের নানা হুমকী ও ভয় ভীতিতে অতিষ্ট হয়ে ইয়াসমিন আক্তার চলতি বছরের জুলাই মাসের ১৯ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টায় সেলিমের বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। অভিযোগ নাম্বার ১৩৮৫/২০২২

চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আমরা ৩ খালাত ভাই, খালার ছেলে ফাহিম ও খালু ফরিদ আংকেলের নামে  একটি সি আর মামলা করেন। যার নাম্বার ১৫৮৬। সেলিম জুন মাসের ২৬ তারিখ দুপুর ও জুলাই মাসের ১৯ তারিখ বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে নগরীর কোতোয়ালী থানায় দুইটি সাধারণ ডায়েরী কথা উল্লেখ করেন। যাতে তিনি আমাদের বিরুদ্ধে সিসি ক্যামেরা ভাঙ্গা, গালাগালি, মারধর বিল্ডিং ও গেইট ভাঙ্গা সহ ২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা ক্ষতি করার অভিযোগ করেন।

স্থানীয় ও প্রতিবেশীদেরে উক্ত অভিযোগ ২ টির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা প্রতিবেদককে জানান, ২৬ জুন ও ১৯ জুলাই এই ধরনের কোন ঘঠনা ঘটেনি। বরং সেলিমের কাছে ইয়াসমিন ও তার স্বামী ভাড়া চাইতে গেলে তাদের প্রাণনাশের হুমকীদেন সেলিম।

তারা আরো জানান, মূলত সেলিমের বড় ভাই শাহিনের মৃত্যুর পর ভাইয়ের অসহায় পরিবারকে জিম্মি করে ভাবীর সম্পত্তি ও রেয়াজউদ্দিন বাজারের দোকান তার নামে লিখে নেওয়ার  জন্য  প্রতিনিয়ত নির্যাতন করে আসছেন ভাবী গুলনাহার বেগমকে। এরি সাথে সেলিম নিজেকে ফ্লাটের ভাড়াটিয়া নয় বরং মালিক বলে দাবী করেন।

উল্লেখ্য সেলিম কর্তৃক সিআর মামলার বিবরনীতে, নিজেকে ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া নয় মালিক হিসেবে দাবী করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন তার বড় ভাই তাকে ফ্ল্যাটের নীচ তলার অর্ধেক ও ২য় তলার দখন অর্পন করেন।

বড় ভাই শাহীনের সাথে ইয়াসমিন আক্তারের ২০১১ সালে সম্পাদিত চুক্তির ধারাবাহিকতায় ২ টি চুক্তির কথা উল্লেখ করেন। ভাইয়ের সাথে চুক্তিপত্রের শর্তানুসারে তিনি শাহীনকে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে ১০ লাখ টাকার মধ্যে ৬ টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে ভাইয়ের জরুরী টাকা প্রয়োজন হলে তিনি আরো ১৭ লাখ টাকাসহ মোট ২৩ লাখ টাকা বড় ভাই শাহীনকে প্রদান করেন বলে উল্লেখ করেন।

তিনি আরো উল্লখ করেন, আমার সাথে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের শর্তানুসারে ফ্লাটের নীচ তলার অর্ধেক ও ৩য়, ৪র্থ তলার সম্পূর্ণ ফ্লাট ছেড়ে দিবেন। তিনি ৩য় ও ৪র্থ তলার কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় নীচ তলার অর্ধেক ও ২য় তলায় ১১ বছর ধরে বসবাস করছেন বলে জানান। এরি সাথে তিনি নিজেকে ফ্লাটের মালিক বলে উল্লেখ করেন।

এব্যাপারে ইয়াসমিন আক্তার জানান, সেলিম ১১ বছর ধরে আমার ফ্লাটের ভাড়াটিয়া। একজন ভাড়াটিয়া দীর্ঘ ২০১২ সাল থেকে ভাড়া দিয়ে আসতেছেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসেও তিনি ভাড়া দিয়েছেন। এরপর ভাড়া না দিলেও কখনও নিজেকে মালিক দাবী করেননি।

শাহীনের স্ত্রী গুলনাহার জানান, দীর্ঘ ১১ বছর আমার দেবর সেলিম ভাড়া প্রদান করলেও তার বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর নিজেকে ফ্ল্যাটের মালিক দাবী করেন। এরি সাথে তার সাথে আমার স্বামীর ২ টি চুক্তির কথা জানান। যা আমার স্বামী কখনও আমাকে বা আমার বোনকে জানানি। এমনকি আমাদের ফ্যামেলির কাউকে জাননি। সেলিম আমার স্বামীর স্বাক্ষর জাল স্টাম্পের মাধ্যমে নিজেকে এই ধরনের মালিক দাবী করছেন। যার কোন ভিত্তি নেই। এমনকি আমার স্বামী জীবিত থাকাকালীন কখনও সেলিম নিজেকে ফ্ল্যাটের মালিক বলে দাবী করেননি।আর আমার স্বামী কখনও ছোট ভাই সেলিমের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন কিনা তা আমাদের জানা নেই। আমার স্বামী টাকা নিলেও আমরা সবায় জ্ঞাত থাকতাম। সেলিমের এমন দাবী আমাদের সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি জিডি করেন ইয়াসমিন আকতার।
ইয়াসমিনের স্বামী ফরিদ জানান, যে লোক ২০২০ সালের শেষ পযন্ত আমাদের ফ্ল্যাটের ভাড়া প্রদান করে সে কিভাবে ২০১৭ চুক্তির কথা বলে আর ফ্ল্যাটের দাবী করে। সেলিম কেন ভাই জীবিত থাকতে এমন দাবী করেননি।২০১৭ সাল থেকে চুক্তিপত্র অনুসারে সেলিম মালিক হলে কেন তিনি পরবর্তী ৪ বছর আমাদের ভাড়া দিলেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ইয়াসমিনের ভাগিনা আকাশ, আসিফ, স্বামী ফরিদ ও ছেলে ফাহিম গত মাসের ৩ তারিখ সেলিমের করা সিআর মামলা ন্যায় বিচারের স্বার্থে সুষ্ঠও নিরেপক্ষ তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর একটা আবেদন করেন। এরি সাথে চলতি মাসেও তারা খালার জমি, ঘর, দোকান আত্মসাৎ ও মিথ্যে মামলা প্রতিকার চেয়ে পুলিশ কমিশরান বরাবর সেলিমের বিরুদ্ধে অপর একটি আবেদন করেন।

এ বিষয়ে সেলিমের সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলে, তিনি কোন রকম কথা বলতে রাজি হননি।

তদন্ত কর্মকর্তা এস আই আফরোজা চৌধুরী সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি প্রশিক্ষনে থাকায় এই বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ নিয়ে অসহায় ইয়াসমিন ফরিদ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

শেয়ার করুন

আরো বিভন্ন নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 somoybanglatv.com
Theme Customization By Monsur Alam