চাইলাম সেতু, নৌ-মন্ত্রী দিলেন ফেরী, বাস্তবে হবে সংস্কার জেটি।
এম,নুরুল কাদের,মহেশখালী প্রতিনিধিঃ
কক্সবাজার শহরের সাথে মহেশখালী দ্বীপের যাতায়াতের অন্যতম নৌ রুট।
সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জেটি ঘাট কর্তৃপক্ষ যেমন ইচ্ছে তেমন করছেন, দায়িত্বশীলগণের জোরালা কোন ভূমিকা দেখা যায় না।
এমন ভোগান্তি থেকে বাঁচতে মহেশখালীবাসি ব্রিজ’র দাবি করছেন অনেক বছর আগে থেকে। কিন্তু সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া আর তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি।
গেল ২৫ জুন দেশের গর্ব পদ্মা ব্রিজ উদ্বোধনের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফেরির দাবি করেন,স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক জাতীয় সংসদে পদ্মা ব্রিজের জন্য বেকার হয়ে পড়া বিআইডবি উটিএ এর ফেরি কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ রুটে চলাচলের জন্য প্রদানের দাবি জানান, নৌ মন্ত্রী আশ্বাসও দিয়েছিলেন, কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ রুটে জনপ্রতিনিধি ও দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদগণ বার বার ফেরির আশ্বাস দিলেও, বাস্তবে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। উল্টো মহেশখালীবাসি পাচ্ছেন লম্বা জেটি। এমন খবরে সাধারণ মানুষ আবারও জনপ্রতিনিধিদের মিথ্যা আশ্বাসের কাছে পরাজিত হলেন বলেই মনে করছেন সচেতন নাগরিক।
সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ঢাকা থেকে রোহিঙ্গা প্রজেক্টের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে মহেশখালী’র নতুন জেটি নির্মাণ কাজ। এই জেটি নির্মাণের টেন্ডার আহবান করা হয়েছে গেল ২৯ আগস্ট। টেন্ডারের ডিজাইন বা অন্যান্য ব্যাপারে কোন প্রশ্ন থাকলে সেই মিটিংয়ের ধার্য তারিখ ছিল ৩০ আগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১১.৫৯টা পর্যন্ত টেন্ডারটি কিনে অংশ নেয়ার শেষ সময় ছিল এবং একই দিন টেন্ডারটি খোলা হয়েছে। জেটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে আগামী ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে।
বর্তমানে জরাজীর্ণ জেটির ডান পাশ দিয়ে এই নতুন জেটি নির্মাণ করা হবে। জেটির মাথা বা টার্মিনাল পার্ক (যেখানে আই লাভ মহেশখালী লেখা রয়েছে) থেকে প্রায় ৩০০ মিটার আরসিসি সড়কের পর টার্মিনাল পার্ক হবে। এরপর জেটির মূল অংশ শুরু হবে। সড়কের উভয় পাশে বøক ও গাইড পোস্ট ব্যবহার করা হবে। দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ মিটার, এটি কক্সবাজার-মহেশখালী-বদরখালী নৌ রুটের ত্রি-মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। জেটির শেষ মাথায় আধুনিক মানের একটি প্লাটফর্মও নির্মাণ করা হবে, যেখানে থাকবে যাত্রী ছাউনি, টয়লেট সহ নানা রকম সুযোগ-সুবিধা।
এ ব্যাপারে আক্ষেপ করে মহেশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম জানান, ব্রিজ ও ফেরি হলে কিছু ব্যক্তির ক্ষমতা জাহির কমে যাবে তাই এটির বাস্তবায়ন হচ্ছে না। রুটি-রুজি, চাঁদাবাজির ভিত্তি মজবুত করতে নতুন জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রবীণ সাংবাদিক বন্ধুরা জানান মহেশখালী উপকূলের জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ পথে ফেরি সার্ভিস তথা গণপরিবহন চালু করে জনগণের স্বল্প খরচে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা। এ দাবির পাশ কেটে ফেরি সার্ভিস চালুর পরিবর্তে নতুন জেটি নির্মাণ করা সর্বসাধারণের কাঙ্খিত উপকারে আসবে না। উপকূলের মানুষ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নিরাপদ ভাবে তাদের মালামাল ও যানবাহন পারাপারের সুবিধাটাই দাবি করেছিল সরকারের কাছ থেকে। তা না করে জেটি নির্মাণ কাজ করা মানে রোগীর রোগের চিকিৎসা না করে তাকে দামী দামী পোশাক পরিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার সামিল বলে মনে করি। এতে উপকূলবাসীর সমস্যা তিমিরেই এই রয়ে যাবে।
জেটি ঘাটের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী এস.এম রুবেল বলেন, ২০১৭ সালে ফেরি আনার কথা বলে পুরাতন জেটিঘাট সংলগ্ন খাল খনন করে পাশের খালের অংশ ভরাট করেছে। কিন্তু খালটি আবারো ভরাট হয়েছে। ফলস্বরূপ ফেরির দেখা পায়নি। পাবেও বলে মনে হয়না। বরং খাল দখলে নিয়ে দুটি মাঠ ভরাট করেছে। জনদুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ কেউ নেয়নি এবং নিচ্ছেওনা। জেটিঘাট হোক আমরা চাই। আর এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। এর আগে আমরা জনদুর্ভোগ লাঘবে যা আছে এখন তার সুষ্টু বন্টন চাই।
ঘাটে আসলেই অনেক কষ্টকর। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সেখানকার ফেরিগুলো এই রুটে এনে ব্যবহার করার জন্য মাননীয় সংসদ সদস্যের জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত।
সেতু আমাদের স্বপ্ন, সেটির দাবি সবসময় অব্যাহত থাকবে।
এখানে ফেরির চেয়ে জেটি হলে অনেকটা ভালো হবে, কারণ ফেরি হলে দিন দিন পলি মাটি জমে ভরাট হচ্ছে নদী, সেই কারণে ফেরি আসলে ভাটার সময় দূর্ভোগে পড়বে মানুষ, সেতুর দাবিতে মহেশখালীবাসি অনড় রয়েছে।
নৌ রুটের সবচেয়ে দূর্ভোগের স্থান হচ্ছে মহেশখালী জেটি প্রান্তের খালটি। এই খালটি প্রতি বছর ভরাট হয়ে যায় বলে শুষ্ক মৌসুমে যাত্রী পারাপারে খুবই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। প্রতি বছর ড্রেজিং করা হলেও পলি মাটি জমে তা ভরাট হয়ে যায়, যার ফলে ভাটার সময় প্রচুর ভোগান্তিতে পড়তে হয়।