1. newsiqbalcox@gmail.com : Somoy Bangla : Somoy Bangla
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৮ পূর্বাহ্ন

জুয়া খেলার ভিডিও ছড়ালো ছেলে, বাবাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করলো জুয়াড়িরা!

ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১
  • ১০১৫ ভিউ সময়

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার সদরের ইসলামপুরে দিনেদুপুরে চলা জুয়ার আসরের একটি ভিডিও প্রশাসনকে সরবরাহ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়েন এলাকার প্রতিবাদী তরুণ হিসেবে পরিচিত প্রকৌশলী মো. শাহেদুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (৬ জুলাই) চলা জুয়া খেলার ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীতার জন্য তদবিরে থাকা সাবেক বিএনপি নেতা শরীফসহ জুয়া খেলারত চিহ্নিতদের মুখোশ সবার মাঝে উন্মোচন হয়ে পড়ে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ইউনিয়নের নতুন অফিস বাজার এলাকার ধলা মিয়ার চায়ের দোকান হতে প্রকাশ্যে প্রকৌশলী শাহেদের বাবা ফরিদুল আলমকে তুলে নিয়ে যায় শরীফ ও জুয়ার বোর্ড পরিচালনাকারী রমজানের লোকজন।

তাকে প্রথমে নাপিতখালী বটতলস্থ শরীফের ট্রান্সপোর্ট অফিসে এবং পরে ঘোনারপাড়া গ্রাম দিয়ে পাহাড়ের ভেতর তাদের অপরাধ আস্তানায় নিয়ে বেদম প্রহার করা হয়েছে। আস্তানায় মজুদ রাখা নারীর সাথে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ শেষে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও নেওয়া হয়। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে ইঞ্জিনিয়ার শাহেদের বাবাকে পাহাড়ের ভেতর সেই আস্তানা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এসব তথ্য উল্লেখ করে চারজনের নাম দিয়ে ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে ঈদগাঁও থানায় এজাহার দিয়েছেন নিপীড়নের শিকার বৃদ্ধ ফরিদুল আলম। তিনি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, কামাল হোসেন (৩৮), মো. শরিফ (৪৫), এরশাদ (৩০) ও রমজান (৩৮)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১৫ জন।

চিকিৎসাধীন ফরিদুল আলম। ছবি: ইত্তেফাক কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম এজাহার পাওয়া ও ভিকটিমকে পুলিশ কর্তৃক উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ফরিদুল আলম (৬০) এজাহারে উল্লেখ করেন, তিনি এলাকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান এবং সমাজসেবক। কিন্তু অভিযুক্তরা এলাকার খারাপ প্রকৃতির হিসেবে পরিচিত। ২ নম্বর অভিযুক্ত শরীফের প্রত্যক্ষ প্ররোচনা ও নেতৃত্বে অন্য অভিযুক্তরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দীর্ঘদিন এলাকায় মাদক ব্যবসা, পাহাড় কাটা, জুয়ার আসর বসানোসহ নানা অপরাধ সংঘটন করে আসছে। কিন্তু অপরাধীরা সবাই একীভূত এবং শরীফের ভাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান হওয়ায় তাদের অপরাধের বিষয়ে জানলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। কিন্তু চট্টগ্রামে স্বপরিবারে বসবাসরত আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদুল ইসলাম তাদের কৃত অপরাধের বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণসহ তথ্যাদি প্রশাসন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরবরাহ এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্রকাশ করে আসছিল। গত মঙ্গলবারও অভিযুক্তরা এলাকায় প্রকাশ্যে জুয়ার আসর বসান। সেটি কে বা কারা ভিডিও ধারণ করে। ভিডিওর কপি আমার ছেলের হাতে গেলে প্রশাসনকে সরবরাহ করে এলাকার নৈতিক অবক্ষয়ের বিষয় তুলে ধরে তার ফেসবুক একাউন্টে প্রচার করে।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, জুয়া খেলার ভিডিও প্রচারের পর অভিযুক্তরা আমার ছেলে ও আমার পরিবারের উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। ২নম্বর অভিযুক্তের ইন্ধনে তার সিন্ডিকেটের লোকজন আমার ও আমার পরিবারের ক্ষতির চেষ্টা অব্যাহত রাখে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সকালে আমি নতুন অফিস বাজারে গিয়ে ধলা মিয়ার চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলাম। বেলা সাড়ে ১২টার সময় অভিযুক্তরা অবৈধ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় এসে আমাকে চারপাশে ঘিরে ফেলে। ১নম্বর অভিযুক্ত আমার মাথায় বন্দুক তাক করে ধরে রাখলে অপরাপর অভিযুক্তরা শার্টের কলার ধরে টানা হেছড়া করে তাদের আনিত একটি ইজি বাইকে (টমটম) তুলে প্রথমে বটতলী ২নম্বর অভিযুক্তের শরিফ ট্রান্সপোর্ট অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে তার নির্দেশে অন্য অভিযুক্তরা আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও এলোপাথাড়ি মারপিট করে। অনুমান আধা ঘণ্টা পর ২নম্বর অভিযুক্তের নির্দেশে অন্যরা আমার চোখে কাপড় বেধে পুনরায় গাড়ীতে করে নিয়ে যায়। পরে আমার অবস্থান বুঝতে পারি ইসলামপুর ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের ঘোনা পাড়া নামক স্থানের পূর্ব দিকে গহীন পাহাড়ে একটি পরিত্যক্ত বাড়ীতে।

তিনি এজাহারে আরো উল্লেখ করেন, সেই বাড়িতে আমার চোখের কাপড় খুলে আমাকে আবারো মারপিট করা হয়। একপর্যায়ে অভিযুক্তরা ৩০-৩৫ বছরের অজ্ঞাত এক নারীর সাথে আমার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ২নম্বর অভিযুক্তের মোবাইলে ধারণ করে। তারা ১০০ টাকা মূল্যের তিনটি নন জুডিসিয়াল খালিস্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়। আমাকে অপহরণের খবর পেয়ে আমার ছেলের শাহেদ জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল করলে বিকেল ৩টার দিকে ঈদগাঁও থানার একদল পুলিশ এসে আমায় সেই আস্তানা হতে প্রায় অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু অভিযুক্তরা আমার পরিবার ও আমার ছেলেকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে বলছে, সংঘটিত ঘটনায় কোন মামলা-মোকদ্দমা করলে পরিবার এবং আমার ছেলে শাহেদকে খুনসহ বড় ধরনের ক্ষতি করবে।

ভিকটিমের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদুল ইসলাম বলেন, আমার মা সংরক্ষিত আসনে মেম্বার ছিলেন দীর্ঘদিন। এলাকার অপরাধ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়েছেন তিনি। তা দেখেই আমার শিশু বেলা কেটেছে। বড় হবার সাথে সাথে মায়ের সেই প্রতিবাদি চরিত্র আমার ভেতর জাগ্রত ছিল। তাই এলাকার যেকোন অনিয়মের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে কথা বলি। এটাই এখন কাল হয়েছে। সাবেক বিএনপি নেতা শরীফ আওয়ামীলীগের তকমায় চেয়ারম্যান হতে মরিয়া হয়ে সকল অপরাধীদের এক করে হাটছেন। এমন কোন অপরাধ বাদ নেই তিনি করছেন না। সেটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এখন আমি ও আমার পরিবার চরমভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। জুয়াড়িরা আমাকে মুঠোফোনে কল করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এর অডিও রেকর্ড রয়েছে। তাদের প্রহারে আমার বৃদ্ধ বাবা মারত্মক জখম পেয়েছেন। তিনি বৃহস্পতিবার রাত থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শাহেদ আরো বলেন, পুলিশ সুপার, ডিআইজিসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মামলা নিতে বললেও, ঈদগাঁও থানার ওসি ঘটনার প্রধান নায়ক শরীফকে বাদ দিতে আমাকে তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু আমার বাবা বলছেন, শরীফ দু’দফা লাথিসহ নানা ভাবে প্রহার করে নারীর সাথে ছবি তুলতে উলঙ্গ করেছেন। অপরাধীদের জন্য ওসির তদবির সন্দেহজনক।

এ বিষয়ে সর্বশেষ পদক্ষেপ জানতে চাইলে ঈদগাঁও থানার ওসি আবদুল হালিম বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে মো. শরীফের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। রিং হলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার করি। এজাহার পাওয়া গেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত যে বা যারাই থাকুক তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঈদগাঁও থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

আরো বিভন্ন নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 somoybanglatv.com
Theme Customization By Monsur Alam